আজকের এই ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার দাপাদাপিতে ও কিছু জিনিস বঙ্গ জীবনের অঙ্গ হিসেবে থেকে গেছে মহালয়া দিনে বাংলায় মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানটিও ঠিক সেইরকম। আপামর বাঙালি সারা পৃথিবীতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে মহালয়া না শুনলে পূজো এসেছে বলে ভাবতেই পারেনা। 90 বছর পরেও তাই অনুষ্ঠানটির জনপ্রিয়তায় এতোটুকু ভাটা পড়েনি। আমাদের আবেগের সঙ্গে আমাদের ছেলেবেলা যৌবন সবকিছুর সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে এই অনুষ্ঠানটি। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো যদিও অনুষ্ঠানটি মূলত একটি স্তোত্রপাঠ কিন্তু এর সঙ্গে সংগীত এমনভাবে সংযোজিত আছে যে এটি আমাদের কানের মধ্যে দিয়ে মনের মনিকোঠা ছুঁয়ে যায়। এই মহালয়ার অনুষ্ঠানটি নিয়ে বেশ কিছু গল্প আছে তারই কিছু আজ ভাগ করে নেব সকলের সঙ্গে।——- সময়টা ১৯৩১ সাল, ঠিক হলো আকাশবাণী ভবন থেকে সরাসরি চণ্ডীপাঠ সম্প্রচার করা হবে করবেন শ্রী বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র মহাশয়, যিনি কলকাতার রেডিওর অনুষ্ঠানের জন্মদাতা যিনি প্রথম থেকেই কলকাতা রেডিওর পরিচিত গলা। শ্রী পঙ্কজ কুমার মল্লিকের সংগীত সঞ্চালনায় ও বাণীকুমারের লেখা স্ক্রিপ্ট এর উপর তিন মাস ধরে সব কলাকুশলীদের নিয়ে চলল রিয়ার্সাল, তবে প্রথম থেকেই এই অনুষ্ঠানটির নাম “মহিষাসুরমর্দিনী” ছিল না। ১৯৩১ সালে বাসন্তী পুজোর সময় প্রথম “চণ্ডীপাঠ” হিসেবে সম্প্রসারণ হয় তারপর ১৯৩২ সালে “প্রত্যুষ প্রোগ্রাম” নামে চতুর্থীর দিন শোনানো হয়, ১৯৩৬ সালে ষষ্ঠীর সকালে “মহিষাসুর বধ” নামে প্রকাশ পায়। আরো অনেক অদল-বদল এরপর সবশেষে ১৯৩৭ সালে এটি “মহিষাসুরমর্দিনী” নামে মহালয়ার দিন ভোর চারটে থেকে সম্প্রসারণ হতে থাকে। ১৯৪৭ সালের সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার কারণে ওই ভোররাতে কলাকুশলীদের আকাশবাণী ভবন এ নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি বলে অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি। সেই বছরই রেকর্ডিং এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হয় তারপর স্বাধীনতার পর ১৯৪৮ সালে প্রথম রেকর্ডিং করা হয় “মহিষাসুরমর্দিনী”। দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত গান “জাগো তুমি জাগো” সেই গানটি রেকর্ডিং এর আগে পঙ্কজ কুমার মল্লিক দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়কে মাইক্রোফোনের কিছুটা দূর থেকে টেনে এনে মাইক্রোফোনের সামনে বসেছিলেন এবং তাকে বলেছিলেন যে গানটি যেন তিনি একটু দূর থেকেই ধরেন এর ফল হয়েছিল অসাধারণ গানটি শুরু হয়েছিল প্রায় একটি প্রতিধ্বনির মধ্যে দিয়ে। আরো একটি গল্পে আমরা জানতে পারি যে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের স্তোত্র পাঠ নিয়ে সেই যুগে প্রবল আপত্তি হয়েছিল কারণ তিনি ব্রাহ্মণ সন্তান ছিলেন না। রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বাণীকুমার তিনি বলেছিলেন যে এটি একটি অনুষ্ঠান কোন ধর্মগ্রন্থ নয়। আজকেও আমরা সেই যুক্তির বিবেচনার কথা অনুভব করতে পারি। কারণ এই অনুষ্ঠান বুঝি আর কারো দ্বারা কখনো সম্ভব নয়। আরেকটি ঘটনায় আমরা জানতে পারি ১৯৭৪ সালে একটি হাওয়া উঠেছিল চারিদিকে সব কিছু পরিবর্তনের, যা কিছু পুরনো তাকেই পরিবর্তন করো। এই পরিবর্তনের হাওয়া থেকে বাঁচতে পারেনি “মহিষাসুরমর্দিনী” অনুষ্ঠানটিও ১৯৭৬ সালে এই একই অনুষ্ঠান করানো হয় উত্তমকুমারকে দিয়ে তার সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অনুষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়েছিল “দেবী দূর্গতিহারিণী” নামে এই অনুষ্ঠানে তামাম বড় বড় শিল্পীরা কাজ করেছিলেন লতা মঙ্গেসকার থেকে বসন্ত চৌধুরী থেকে অনেক নামিদামি শিল্পীরা, কিন্তু তা সত্ত্বেও অনুষ্ঠানটি মুখ থুবড়ে পড়েছিল চারিদিকে বিজ্ঞাপন এবং প্রচারের কোন খামতি ছিলনা কিন্তু তা সত্বেও বাঙালি কোনভাবেই গ্রহণ করেনি অনুষ্ঠানটিকে। এই সম্পর্কে একটি সাক্ষাৎকারে জগন্নাথ বসু বলেছিলেন যে আকাশবাণীর সামনে প্রতিবাদের ঢল নেমেছিল সেবার এবং আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ পুরনো অনুষ্ঠানটিকে পুনঃপ্রচার করতে বাধ্য হন সে বছরই ষষ্ঠীর দিন সকালে। বাঙালি বুঝিয়ে দিয়েছিল যে তারা বেগে হাত দিলে তার পরিণাম কি হতে পারে। এই ১:৩০ ঘন্টার “মহিষাসুরমর্দিনী” অনুষ্ঠানটি আজও আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার কল্পনাকে একই রকম ভাবে নাড়া দেয়। এই কৃতিত্ব তিনজনের সঙ্গে যত শিল্পী কলাকুশলী অনুষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারাও অমর হয়ে গেছেন। ভোর চারটের সময় রেডিওতে “মহালয়া” শোনার হিড়িক বাঙালি আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এই অনুষ্ঠানে জনপ্রিয়তার আরো একটি বড় প্রমাণ হলো সিডি এবং ইউটিউবেও সমানভাবে জনপ্রিয় এই অনুষ্ঠানটি। সারাবছর বাঙালি তার রেডিওটির খোঁজ করুক বা না করুক মহালয়ার আগের দিন তার সেই রেডিওটি কে বার করে তৈরি করে রাখা দুর্গা পুজোর আগে বাঙালির জীবনে একটি অবিচ্ছেদ্য কাজ। যতদিন বাঙালি দুর্গাপূজা নিয়ে মেতে থাকবে ততদিনই বোধহয় এই “মহিষাসুরমর্দিনী” অনুষ্ঠান বাঙালির হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। পিতৃ পক্ষের শেষে দেবী পক্ষের যে সূচনা তা অন্তত বাঙালির কাছে এই অনুষ্ঠানটি ছাড়া সম্ভব নয়। এরকম আরো বহু ঘটনা আছে এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে। সকল বন্ধুদের শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের এই অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি, সকলে ভাল থাকবেন এবং সকলের পুজো যেন খুব ভালো কাটে এই কামনা করি।

By Lokenath_Education

OUR MISSION: To keep the education affordable for students, provide best information to students about courses. Lokenath Education trusts that everybody has the privilege to a world-class training. Recognizing the existing barriers in academia, we continue our efforts to curate an unparalleled collection of free online courses. To develop future leaders, managers and entrepreneurs world-wide through World class online educational portal. OUR VISION: Lokenath Education will be a pioneer in combination of educating, learning and innovation. In addition, we will strengthen our preeminent programs and encourage the development of specific new programs that present strategic opportunities for all.

Leave a Reply

Your email address will not be published.